রাঙ্গুনিয়ায় পরিবেশ দূষণ মারাতœক আকার ধারণ করলেও নিরব কর্তৃপক্ষ

রাঙ্গুনিয়ায় পরিবেশ দূষণ মারাতœক আকার ধারণ করলেও নিরব কর্তৃপক্ষ জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি:: সৃষ্টিলগ্ন থেকে পৃথিবীর বুকে যে প্রাণ ও প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন থেকেই সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের পথ ধরেই একটু একটু করে গড়ে ওঠেছিল পরিবেশ। সেদিন প্রকৃতি ও পরিবেশে সাম্য ছিল। কিন্তু দিন বদলের পালায় এ পরিবেশের মধ্যেই তার বিনাশের ইঙ্গিত। পৃথিবীব্যাপী পরিবেশের এই ধ্বংশ লীলায় পিছিয়ে নেই রাঙ্গুনিয়াও। একদিকে রাঙ্গুনিয়ার পাশ ঘেষে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদীর পাড়ের কারখানাগুলোর বর্জ্যের মাধ্যমে পানি দূষণ অন্যদিকে ইট ভাটায় ইট তৈরিতে পাহাড় ও কৃষি জমির উপরি ভাগ কেটে মাটি ও পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ। এ থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে দুষিত হচ্ছে বায়ু, বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকি। যা একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করছে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এসে পৌঁছেছে এক সংকটজনক অবস্থায়। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের ভেতর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর, উত্তর রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, লালানগর, হোসনাবাদ, কোদালা, সরফভাটা, বেতাগি ও চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪টি ইটভাটা রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সহ বিভিন্ন বনাঞ্চল উজাড় করে কেটে আনা কাঠ। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় রানিরহাট কোদালা, সরফভাটা, বেতাগী সহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে অনেকটা প্রশাসনের নাকের ডগায় নির্ভিগ্নে ইটের ভাটায় যাচ্ছে বন উজার করা এই সব কাঠ। স্থানিয়দের অভিযোগ সরকারী নীতিমালার কোন তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহেলের সহযোগিতায় বন ও কৃষি ভূমি ধ্বংস করে দিয়ে প্রতিনিয়ত এই কাঠ নির্র্বিগ্নে পোড়ানোর মহাৎসব চলছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে ওঠা এইসব ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া ও গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ধূলিকণার উপস্থিতির কারণে রাঙ্গুনিয়ার পরিবেশ দূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদিকে ইট ভাটায় মাটি সরবরাহ সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে প্রকৃতির খুটি খ্যাত পাহাড় কাঠার ধুম লেগেছে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় পোমরা, চন্দ্রঘোনা, কোদালা, রানিরহাট সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্ভিগ্নে চলছে পাহাড় কাটার ধোম। যা বিনষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। বাড়িয়ে তুলছে ভূমিকম্পের মতো নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি। রাঙ্গুনিয়ার ভূ ভাগে যখন পাহাড় কাটা, বন উজাড় করা, ইট ভাটার মাধ্যমে চলছে পরিবেশের ধ্বংশ লীলা তখণ অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদী সহ বিভিন্ন ছোট বড় খালে চলছে মাত্রারিক্ত পানি দূষণ। এই যেন জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ। কর্ণফুলী নদীর পাশ ঘেষে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে অপসারণ, পানি দূষণের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় চন্দ্রঘোনার নদী পাড়ে গড়ে ওঠা কাগজ কল হতে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য অপসারিত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। যা একদিকে যেমন দূষণ করছে নদীর পানি অন্যদিকে দূষণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ। কমে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর মাছের স্বাধ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ছোট ছোট খালে ফেলা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভার মাধ্যমে বিভিন্ন ডাষ্টবিন থেকে আনা বর্জ্যসহ বিভিন্ন বাজারের শত শত টন বর্জ্য। বিষয়গুলো জানার পর ও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে প্রতিদিন উপজেলা হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বেসরকারী হাসপতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ভীর দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতির শিকার। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলছেন, শুধুমাত্র বায়ু দূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী দুইভাবে আক্রান্ত করতে পারে। বায়ু দূষণের কারণে স্বল্প মেয়াদে চোখ ও নাকে ব্যাথা হয়। এছাড়া ব্রন্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো মারাতœক রোগ হয়। পক্ষান্তরে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা এমনকি ব্রেইন, নার্ভ, লিভার ও কিডনী নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন- পানিবাহিত রোগ: ডায়েরিয়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত: টাইফয়েড সংক্রমন, কলেরা, প্যারাটাইফয়েড জ্বর, বেসিলারী আমাশয়, ভাইরাল সংক্রমণ (জন্ডিস), পোলিওমাইলিটিস হেপাটাইটিস সংক্রমণ, প্রোটোজল সংক্রমণ, অ্যামোবিক আমাশয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি উত্তরণে অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাান আদালত সহ রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন টিম এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এটাকেই যথেষ্ট মনে করছে না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পরিবেশ আইন ও আদালতের সীমিত এখতিয়ারের কারণে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকায় খুব একটা ফল মিলবে না। পরিবেশ দূষণ মানব সভ্যতার জন্য ভয়ংকর বিপদের পূর্বাভাস। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজন। জনসচেতেনতা সৃষ্টি সহ পরিবেশ দূষনের জন্য দায়ি বিভিন্ন সোর্সগুলো চিহ্নিত করে তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমণটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।
 


Author:

Facebook Comment