অবাধে কাঠ পুড়ছে রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক ইটভাটায়

অবাধে কাঠ পুড়ছে রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক ইটভাটায়
জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া সংবাদদাতা : দিনে ৩০ লাখ টাকার কাঠ পুড়ছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শতাধিক ইটভাটায়। জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীচক্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব কাঠ কেটে জিপে (চাঁদের গাড়ি) করে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক দিয়ে প্রকাশ্যে এসব কাঠ নেওয়া হলেও বনবিভাগ ও প্রশাসন নির্বিকার। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিন ব্যাপী ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে উত্তর রাঙ্গুনিয়ায় ৩০ টি ইঠভাটায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামিম আল ইয়ামিনের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের পরেও পুনরায় বেপরোয়াভাবে ইটভাটাগুলোতে জ্বালানী কাঠ পুড়ানোর মহাউৎসব থেমে নেই। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, রাঙ্গুনিয়ায় বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ পুড়ানোর কারণে উপজেলার সার্বিক পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এতে ভূমিকম্পের মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির দিকে ধাবিতে হচ্ছে এই উপজেলা। অভিলম্বে কাঠ পুড়ানো বন্ধ করা না হলে রাঙ্গুনিয়ায় পরিবেশ রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে ওঠবে বলেও এই সময় জানানো হয়। স্থানীয়রা কাঠ পুড়ানো এই মহাউৎসব বন্ধ করার জন্য অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালতের যৌথ অভিযান পরিচালনার জোর দাবী জানিয়েছেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক, রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়ক, ফেরিঘাট চন্দ্রঘোনা সড়ক, শিলক কালিন্দারানী সড়ক, বেতাগী আমানুল্লাহ সড়ক, মরিয়মনগর চৌমুহুনী ডিসি সড়ক, সরফভাটা মীরেরখীল সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চাঁদের গাড়ি যোগে কাঠ পাচার কালে জন চলাচল মারাত্বক বিঘœ ঘটে। বেপরোয়া গতিতে জ্বালানি কাঠ বহনকারী চাঁদের গাড়ির চলাচলে যেকোন সময় মারাত্বক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে। সড়কে উঠলে এসব জ্বালানি কাঠ বহনকারী গাড়ির অস্বাভাবিক গতির কারণে সড়কের সাধারণ মানুষের চলাচলে আতংঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরছে।
৪ জানুয়ারী, সোমবার বিকেলে সরেজমিনে সরফভাটার গোডাউন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জামাল এক্সপ্রেস নামের একটি জিপে জ্বালানি কাঠ তোলা হচ্ছে। জানতে চাইলে গাড়িচালক মো. সবুর জানান, সরফভাটার পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে আনা এসব কাঠ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। একই দিন রাজানগর ইউনিয়নের এবিএম ইটভাটায় গিয়েও জ্বালানি কাঠ পোড়াতে দেখা যায়। জানতে চাইলে ইটভাটার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের ভাটায় প্রতি মৌসুমে কয়লার বিকল্প হিসেবে জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। তবে এবার আগের চাইতে কম জ্বালানি কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। বেতাগী কেএমবি ইটভাটার মালিক মো. ফরিদ বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনে আমরা ইটভাটা চালাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী কয়লা না পাওয়ায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়নো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট, ইসলামপুর, রাজানগর, ঠান্ডাছড়ি, হোসনাবাদ, কোদালা, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা ও বাঙ্গালহালিয়া এলাকার অন্তত শতাধিক ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। চন্দ্রঘোনা রাইখালী ফেরি দিয়ে রাজস্থলী ও কাপ্তাই পাল্পউড বাগানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের খুরুশিয়া দশমাইল এলাকা থেকেও চন্দ্রঘোনা হয়ে হোসনাবাদ নিশ্চিন্তাপুরের নয়টি ইটভাটায় কাঠ পাচার হয়। এ ছাড়া, রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের রানীরহাট, ইসলামপুর, কোদালা, পদুয়া, সরফভাটার চিরিঙা ও পোমরার বন থেকেও কাঠ পাচার হচ্ছে সমানে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এভাবে প্রতদিন শতাধিক চাঁদের গাড়ি করে ১৫ লক্ষাধিক টাকার জ্বালানি কাঠ বিভিন্ন ইটভাটায় ঢুকছে। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও প্রচুর কাঠ পাচার হয়ে আসছে ভাটাগুলোতে। আর এতে শতাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জড়িত। বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া এভাবে প্রকাশ্যে কাঠ পাচার ও পোড়ানো সম্ভব হতো না বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে কাঠ পাচার ও পোড়ানো চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনাঞ্চল অচিরেই বৃক্ষশূন্য হয়ে যাবে এবং এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্রে জানা যায়, শতাধিক জ্বালানি কাঠ পাচারকারী ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট গঠন করে রাঙ্গুনিয়া ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি কাঠ পাচার করছে। ব্যাপক লাভবানে জ্বালানি কাঠ ব্যবসায় হওয়ায় ইট তৈরির তিনমাসের মৌসুমে ব্যাপক অর্থ ভিত্তের মালিক হচ্ছে বলে জানায়। পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ার বন উজাড় করে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস স্বর্ণাল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ ইটভাটায় যাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানান, আমি রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জে যোগ দিয়েছি অল্প কিছুদিন হচ্ছে। এসেই কাঠ পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জনান।

Author:

Facebook Comment