বিক্রি হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া রওশন পল্লীর সরকারী বরাদ্দকৃত প্লট!

বিক্রি হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া রওশন পল্লীর সরকারী বরাদ্দকৃত প্লট!

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া:: ২৭ বছরেও বিদ্যুতের আলো
পৌঁছেনি রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী রওশন পল্লীতে। ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুলের
শিক্ষা কার্যক্রম। পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে শতাধিক পরিবারকে।
বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাজুক অবস্থায় নেমে এসেছে এই গ্রাম। সরেজমিনে গিয়ে
এই চিত্র দেখা গেছে।


জানা গেছে , জাতীয় পার্টির সরকার ক্ষমতা
থাকাকালীন রাঙ্গুনিয়ার ভূমিহীন পরিবারকে পূনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহন করে
সরকার। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পল্লীবন্ধু খ্যাত হোসাইন মোহাম্মদ
এরশাদ এর স্ত্রীর নামে বেতাগী ইউনিয়নে “রওশন পল্লী” নামে আবাসন গড়ে তোলে।
ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করতে ভূমিহীন সমবায় বনায়ন নামে একটি পরীক্ষা
মূলক প্রকল্প চালু করেন বন বিভাগ। তৎকালীন ৮১ পরিবারকে বনায়ন ও থাকার জন্য ৪
একর করে পাহাড় বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৮৬ সালে প্রকৃত ভূমিহীন যাচাই বাছাই করে
১৯৮৭ সালে রওশন পল্লী নামে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে এ পল্লীতে ৫
শতাধিক পরিবার রয়েছে। উদ্বোধনের ২৭ বছর কেটে গেলেও নাগরিক সুবিধা দিতে
ব্যর্থ হয়েছে প্রকল্পটি। নাগরিক সুবিধা না থাকায় অনেকে নিজের জমি বিক্রি
করে অন্যত্র চলে গেছেন। লিজকৃত জমি বিক্রি করার অনুমতি না থাকলেও একশ্রেণীর
অসাধু চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অনেকে বিত্তশালীর কাছে জায়গা বিক্রি চলে যাচ্ছেন।
২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী গুনগুনীয়া বেতাগী গ্রামের আনোয়ার খাতুন পোমরা
এলাকার রফিকুল ইসলামের গংয়ের কাছে ৪০ শতক জমি ৪ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে
দিয়েছে । এলাকার মো. ছোবহান, মো.নুরুন্নবী , আবু তৈয়ব, আলী আহমদসহ একাধিক
ব্যক্তি তাদের বরাদ্দ পাওয়া জায়গা ষ্ট্যাম্প মুলে বিক্রি করে দেয় অন্যজনের
কাছে। তবে রওশন পল্লী কৃষক, শ্রমিক সমিতির সভাপতি নুুরুল হক এসব অভিযোগ
অস্বীকার করে বলেন, এখানে কোনো প্লট বেচাকেনা হয়নি। বেচাকেনার ভুয়া
কাগজপত্র তৈরি করে সবাইকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
indfex
রওশন পল্লীর বাসিন্দা খায়রা বেগম (৬১)
জানান, প্রায় ৩ যুগ ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় এলাকার মানুষ পিছিয়ে আছে। ছেলে
মেয়েদের লেখাপড়া ও প্রাত্যহিক কাজকর্মে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বিদ্যুতের জন্য বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন ফল হচ্ছেনা।
এলাকার কৃষক মো. জসিম (৪৭) জানান, যোগাযোগ
ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত ফসল ও শস্য কম দামে বিক্রি করে
দিতে হয়। বর্ষাকালে সড়কে করুন অবস্থার সৃষ্টি হয়। পাহাড়ী বসতঘরে ঝুঁকি নিয়ে
বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
এলাকার মো. করিম (৩৭) জানায়, একটি মাত্র
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে ক্লাস। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীদের
পাঠদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কমে গেছে এলাকার শিক্ষার হার।
জানতে চাইলে পল্লীর সাবেক সভাপতি ও
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক মাষ্টার জানান,
গ্রামের কেউ জায়গা বিক্রি করেনি। মানবিক কারনে আতœীয় স্বজনকে হয়ত কেউ কেউ
থাকতে দিয়েছে। প্রফেসর আবদুল আলীম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের
বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, ৫ জন শিক্ষকের পদে আপাতত ২ জন শিক্ষক ক্লাস
নিচ্ছে। অচিরেই শিক্ষক সংকট কাটবে।
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান পেয়ারুল হক চৌধুরী স্বপন জানান, এলাকায়
বিদ্যুতায়নের প্রক্রিয়া চলছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থা
উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়ন সহ নানা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।


জানতে চাইলে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
মুহাম্মদ আলী শাহ বলেন, গ্রামটি কার নামে তা দেখার বিষয় নয়। এ পল্লীর
বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। এলাকার
বিদ্যুৎ সমস্যা,স্কুলের শিক্ষক সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি।

Author:

Facebook Comment