রাঙ্গুনিয়ায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে নিয়ে উদাও যুবক ঃ ১৮ দিন পর উদ্ধার


সরফভাটা প্রতিনিধি : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নিয়ে উদাও হওয়ার ১৮ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে সেভ কাস্টরীতে আছে বলে জানায় পুলিশ। তবে ঘটনার মূল হোতা কতিত প্রেমিক শাহাদাত হোসেনকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। সে ও সহযোগী বাকী অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ। এদিকে কতিত প্রেমিক শাহাদাত হোসেন নিজের ও অপহৃত ছাত্রীর ভূয়া জন্মসনদ বানিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করার কথা জানা গেলেও অপরিণত বয়সে এই ধরণের বিয়ের আইনগত কোন ভিত্তি নেই বলে জানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার। অপরদিকে ভূয়া সনদে অপরিনিত বয়সে বিয়ে রেজিষ্ট্রির গোজব ছড়ানোয় ক্ষুব্দ ছাত্রীর পরিবারটি। তার এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
মামলার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ভূমিরখীল এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র শাহাদাত হোসেন একই এলাকার সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিন (১৪) কে গত ১০ সেপ্টেম্বর অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপরহরণের দিন বিকালে মেয়েটি স্কুল থেকে ফিরছিল। বাড়িতে ফিরতে দেরি করলে তার পরিবার আতœীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করে। কিন্তু তবু মেয়েটিকে পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে অপহরণের ২দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর থানায় নিখোঁজের ডায়েরী করে মেয়েটির পরিবার। এরমধ্যে বিভিন্ন সুত্রে মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে একই এলাকার শাহাদাতা কর্তৃক অপহরণের বিষয় খবর আসে তাদের কাছে। এক্ষেত্রে শাহাদাত স্থানীয় ও তার বিভিন্ন জনের সহযোগীতা নেয়ার বিষয়টি জানা যায়। পরিবারটি বিভিন্নভাবে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও পরে জানতে পারে মেয়েটিকে পুশলিয়ে ভূয়া জন্মসনদ বানিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করার পায়তারা শুরু করে। তখন পরিবারটি আইনগত ভাবে সহযোগীতা চাইলে অভিযোগের আলোকে ১৬ সেপ্টেম্বর ঘটনার মূল হোতা শাহাদাত, তার ৪ সহযোগী ও অজ্ঞাত নামা আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে সুত্রে জানা যায়, অপহরণের পর থেকে কতিত প্রেমিক শাহাদাত মেয়েটিকে হাটাজারী, আনোয়ারা, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে রাখে। একপর্যায়ে তার সহযোগীদের সহায়তায় মেয়ের জন্ম তারিখে ২মে ১৯৯৭ ইংরেজী ও নিজের জন্ম তারিখে ৪ এপ্রিল ১৯৯৬ দেখিয়ে ভূয়া জন্মসনদ বানায়। আর এগুলো নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর আলকরণ এলাকার কাজী মাওলানা জামাল উদ্দিনের কাছে কোর্ট ম্যারেজ করার উদ্দেশ্যে যায়। এদিকে পুলিশের কাছে দেওয়া সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ণপত্র, মেয়েটির পিএসসি পরীক্ষার সনদ ও মেয়েটির মূল জন্মসনদ অনুযায়ী দেখা যায় মেয়েটির সঠিক জন্মসাল ২ মে ২০০২। এমনকি মেয়েটির বাবা-মায়ের বিয়ের রেজিষ্ট্রি থেকে দেখা যায়, তাদের বিয়ে হয়েছিল ২৭ জুন ২০০১ সালে। এ হিসেবে মেয়েটির আসল বয়স দাড়ায় ১৪ বছর ৫ মাস। যা বাংলাদেশের নিকাহ আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ১৮ বছরের কম। অপরদিকে প্রেমিক শাহাদাতের অধ্যায়নরত নিজ কলেজ বুড়িশ্চর শেখ মুহাম্মদ কলেজের প্রত্যয়নপত্র থেকে জানা যায়, তার বয়স ৪ এপ্রিল ১৯৯৬ সাল। কিন্তু সে জন্মসালে ৪ এপ্রিল ১৯৯৪ সাল দেখিয়ে ভূয়া জন্মসনদ বানিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করতে যায়।  
অপহৃত ছাত্রীর চাচা ও মামলার বাদী মো. হাবীব উল্লাহ জানায়, ‘আমার ভাতিজি সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির ছাত্রী। সে এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী। যে সময়টা তার জন্মসাল দেখিয়ে ভূয়া জন্মনিবন্ধন বানানো হয়েছে তখন তার বাবা-মায়েরও বিয়ে হয়নি। আমি আমার ভাতিজির বয়স প্রমাণের জন্য থানায় তার পিএসসি সনদ, বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নপত্র ও মূল জন্মসনদ জমা দিয়েছি। আমার ভাতিজিকে অপহরণের পর থেকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে থানায় মামলা না করতে ও তার আশা ছেড়ে দিতে বলে। অন্যথায় তার অপূরণীয় ক্ষতি করবে বলেও হুমকি প্রদান করে। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মামলার তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ ইসমাঈল জানায়, মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডকুমেন্ট আমরা ইতিমধ্যেই হাতে পেয়েছি। অপহরণকারীর মোবাইল ট্রেকিং করে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণকারীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোর্ট ম্যারেজের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বহাল আইন অনুযায়ী নির্ধারীত সময়ের আগে বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয় না। যদি কেউ জালিয়াতি করে এই ধরণের কোন কার্যক্রম করেও থাকে উপযুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে তা আইনগত ভিত্তি হারায়। অপহরণকারী ও মেয়েটির বিভিন্ন জন্মসনদ থেকে দেখা যায় দু’জনেরই বিয়ে রেজিষ্ট্রির নির্ধারীত বয়স হয়নি।

Author:

Facebook Comment