মাহে রমজানের আগমন ও আমাদের প্রস্তুতি




মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত হোসেন

বছর পরিক্রমায় আবার আমাদের মাঝে উপস্থিত হতে যাচ্ছে মহিমান্বিত রমজান মাসআরবী চন্দ্র বছরের নবম মাস হলো এই মাহে রমজান এটি মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিলের মাস সহস্র রাতের চাইতে উত্তম একটি রাতের মাস সুদকে কিয়ামত পর্যন্ত হারাম করার মাস বদর খন্দক যুদ্ধের এবং মক্কা বিজয়ের মাস হলো এই পবিত্র রমজান মাস এত ঘটনাবহুল সৌভাগ্য মন্ডিত মাসকে স্বাগত জানানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব এই মাসকে বরণ করার জন্য আমাদের উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার আমরা সাধারণত বাড়িতে কোন মেহমান আসার আগে তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি, তার সম্মানার্থে যা যা করা দরকার তার সবটুকু ব্যবস্থা করার নিমিত্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি অথচ বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস, রহমত-মাগফেরাত-নাজাতের মাসকে বরণ করার জন্য আমরা কী সেভাবে প্রস্তুত? বাড়ির মেহমান কে যদি উপযুক্ত সম্মান না দিলে আমাদের মান সম্মানের ক্ষতি হয়, মেহমানের নিকট আমাদের মুখ নিচু হয়ে যায় তাহলে ভেবে দেখা দরকার রমজানুল মোবারকের মতো এরকম সর্বোত্তম একটি মাসের ব্যাপারে যদি আমরা উদাসীন থাকি তাহলে মাস মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের নামে নালিশ করতে পারে ফলশ্রুতিতে আমরা রোজ হাশরের দিনে আল্লাহর দরবারে ধরাশায়ী হবো

রমজান এমন এক আকাংখিত মাস যার আগমনে সমগ্র মুসলিম জাহান নব উদ্যোমে জেগে উঠে বিচিত্র ধরনের আনন্দের পোয়াঁরা বয়ে যায় আসমান জমিনে সৃষ্টি জগৎ ভরে উঠে রহমতের ল্গুধারায় প্রিয় নবী সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রমজানের আগমনি বার্তা দিয়েছেন এভাবে-“রমজানের প্রথম রাত যখন আগমন করে শয়তান এবং অবাধ্য জ্বিনদের শৃংখলিত করা হয় এবং জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, উন্মুক্ত থাকেনা কোন দ্বার, খুলে দেয়া হয় জান্নাতের সবগুলি দরজা, বন্ধ থাকেনা একটিও এদিকে একজন ঘোষক ঘোষনা করেন, হে পূণ্য প্রার্থী নিকটবর্তী হও, হে মন্দ পথ যাত্রী থেমে যাও আবার অনেককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন আর এমনটি রমজানের প্রতি রাতেই চলমান থাকে(তিরমিযি, হাদীস নং-৬৮২)
আল্লাহর প্রিয় হাবীব নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রমজান মাস আসার আগে থেকেই রমজানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন আর সম্মানিত সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে রমজানের বিভিন্ন ফযিলতের কথা বর্ণনা করতেন শাবান মাস আসলে বেশি বেশি নফল ইবাদত এবং রোজা রেখে মাহে রমজানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন সৃষ্টি জাহানের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামআরবী সনের সপ্তম মাস অর্থ্যাৎ রজব মাস থেকে রমজানের বিশেষ প্রস্তুতির কথা আমরা দেখতে পাই প্রিয় নবীর (সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জীবন চরিত থেকে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে আল্লাহর রাসুল রজব মাসে এভাবে দোয়া করতেন- "হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন” (মুসনাদে আহমাদ) আমাদেরও উচিত রমজানের মহা মূল্যবান দিনগুলির জন্য রজব মাস থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করা কারন রমজান এমন একটি মাস যে মাসে একজন মুসলমান তার অতীত জীবনের সমস্ত পাপ পঙ্খিলতাকে মুছন করে হয়ে উঠতে পারে একজন প্রকৃত মুমিন ধৈর্য্য, সংযম, সহনশীলতা, শৃংখলাবোধ, দানশীলতা, ন্যায়পরায়নতা সাম্যের এক মহামিলনের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারকএটি শুধু একটি মাস নয় বলা চলে সারা বছরের Power House. কেননা প্রত্যেক মুসলমান রমজান মাসে ইবাদতের মাধ্যমে সারা বছরের পাথেয় যোগাড় করতে পারে মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে যে তাকওয়ার বীজ বপন করা হয় তা ধীরে ধীরে মহিরুহে পরিণত হয়ে আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার পথ দেখায় এবং মানুষ ধীরে ধীরে সমস্ত পাপাচার ছেড়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে এগিয়ে যায় কেননা রমজান আল্লাহর মাস এবং রোযাদারদের প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন বলে ঘোষনা করেছেন সাহল ইবনে সাআদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “জান্নাতের আটটি দরজা আছে তার মধ্যে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে রোজাদার ব্যতীত কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা (বুখারী, হাদীস নং-৩২৫৭)

সুতরাং আত্নশুদ্ধির মাসকে অতি সমাদরের সাথে বরণ করা আমাদের একান্ত ঈমানি দায়িত্ব সম্মানিত মহিমান্বিত মাসের যদি উপযুক্ত সম্মান আমরা দিতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দূর্ভাগ্যের ব্যাপার আমাদের উচিত হবে রমজানের শিক্ষাকে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য রজব মাস থেকে নিজেদের কে প্রস্তুত করা যাতে করে আমরা আসন্ন রমজানকে ধারন করতে পারি এবং উপযুক্ত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ এবং প্রিয় রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভ করে ইহকালিন শান্তি পরকালিন মুক্তির পথকে সুগম করতে পারি হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করার তওফিক দান করুন আমিন

লেখক: কলামিষ্ট ও সংগঠক


Author:

Facebook Comment